আযান ও ইকামাতের সময় শ্রোতার জন্য যে কাজগুলো করা উচিত নয় ।। শায়েখ ড. বি. এম. মফিজুর রহমান আল আজহারী।

আযান ইসলামের প্রতিভূ পর্যায়ের একটি ইবাদাত। এর উদ্দেশ্য হলো, মানুষকে নামাযের পানে আহ্বান জানানো। আল্লাহর একাত্ববাদ ও বিশ্বনবীর রিসালাতের বিশ্বজনিনতা ঘোষণা করা। আযান ইসলামী সমাজের অস্তিত্বের প্রমাণ। যেখানে মুসলমানগণ আছেন, সেখানেই আযান আছে। তাই আযানের ধর্মীয় গুরুত্বের পাশাপাশি এর রয়েছে সামাজিক গুরুত্বও। আযান মানে ডাক। এই ডাক স্বয়ং স্রষ্টার পক্ষ থেকেই বিঘোষিত হয়। এই ডাক মানবতার প্রকৃত সফলতার ডাক। এই ডাক এক অনন্য, অনুপম ও স্বাতন্ত্রদায়ক ডাক। এই ডাকে সাড়া দেয়া প্রত্যেক মুমিনের দায়িত্ব। এই সাড়া দুই ভাবে হয়। প্রথমত: মুআযযিন যা বলে তাই বলা। শুধু দুই হাই‘আলা ব্যতীত। যাকে আমরা আযানের জাওয়াব বলে জেনে থাকি। এই জওয়াব দেয়া অধিকাংশ আলিমের মতে, সুন্নাহ। অবশ্য কারো কারো মতে, ওয়াজিব। তাই আযান চলাকালে একান্ত প্রয়োজন ব্যতীত আযানের জবাব ছাড়া অন্য কোন কথা বলা আযানের আদব/শিষ্টাচারিতা পরিপন্থী কাজ। যা কোন খাটি মুসলমানের জন্য শোভা পায় না। স্বয়ং মুআযযিনের জন্যও একই কথা প্রযোজ্য।

দ্বিতীয়ত: পাক-পবিত্র হয়ে জামাতে শামিল হওয়া।

হযরত আব্দুল্লাহ বিন ‘উমার থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূল (স.) বলতে শুনেছেন:
(إِذَا سَمِعْتُمُ الْمُؤَذِّنَ، فَقُولُوا مِثْلَ مَا يَقُولُ ثُمَّ صَلُّوا عَلَيَّ، فَإِنَّهُ مَنْ صَلَّى عَلَيَّ صَلَاةً صَلَّى الله عَلَيْهِ بِهَا عَشْرًا، ثُمَّ سَلُوا اللهَ لِيَ الْوَسِيلَةَ، فَإِنَّهَا مَنْزِلَةٌ فِي الْجَنَّةِ، لَا تَنْبَغِي إِلَّا لِعَبْدٍ مِنْ عِبَادِ اللهِ، وَأَرْجُو أَنْ أَكُونَ أَنَا هُوَ، فَمَنْ سَأَلَ لِي الْوَسِيلَةَ حَلَّتْ لَهُ الشَّفَاعَةُ) رواه مسلم.
“তোমরা যখন মু‘আযযিনের আযান শুনতে পাবে, তখন সে যা বলে তা ই বলো”। এরপর আমার উপর দরুদ পড়। যে আমার উপর একবার দরুদ পড়ে, আল্লাহ তার উপর দশ বার দরুদ পড়েন। অতঃপর আল্লাহর কাছে আমার জন্য ‘অছীলাহ’ র প্রার্থনা করো। এটি জান্নাতের মধ্যে এমন একটি স্থান, যা শুধু আল্লাহর একজন বান্দাই পাবেন। আমি আশা করছি, সেই একজন আমি হবো। যে আমার জন্য তা প্রার্থনা করবে, তার জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব হয়ে যাবে” (মুসলিম)।

হযরত যাবির বিন আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (স.) ইরশাদ করেন:
(مَنْ قَالَ حِينَ يَسْمَعُ النِّدَاءَ: اللَّهُمَّ رَبَّ هَذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ، وَالصَّلاَةِ القَائِمَةِ آتِ مُحَمَّدًا الوَسِيلَةَ وَالفَضِيلَةَ، وَابْعَثْهُ مَقَامًا مَحْمُودًا الَّذِي وَعَدْتَهُ، حَلَّتْ لَهُ شَفَاعَتِي يَوْمَ القِيَامَةِ) رواه البخاري،

“মুআযযিনের আযান শুনে যে ব্যক্তি এই দুআটি পড়বে, তার জন্য কিয়ামতের দিন আমার শাফা‘আত ওয়াজিব হয়ে যাবে” (বুখারী)।

ইমাম বুখারী আবু সাঈদ আল-খুদরী (রা.) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূল (স.) ইরশাদ করেন:
“إذا سمعتم النداء، فقولوا مثل ما يقول المؤذن”.
“তোমরা যখন আযান শুনবে, তখন মুআযযিন যা বলে, তা ই বলো”।

এই হাদীসের ব্যাখ্যায় আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী বলেন,
قال العلامة بدر الدين العيني رحمه الله شارحاً لهذا لحديث في شرحه لسنن أبي داود: (وينبغي أن لا يتكلم السامع في حال الأذان والإقامة، ولا يقرأ القرآن، ولا يُسلم، ولا يرد السلام، ولا يشتغل بشيء من الأعمال سوى الإجابة، ولو كان في قراءة القرآن ينبغي أن يقطع القراءة ويسمع الأذان ويجيب).

“আযান ও ইকামাতের সময় শ্রোতার জন্য যে কাজগুলো উচিত নয় :
– কথা বলা;
– কুরআন তিলাওয়াত করা;
– সালাম দেয়া কিংবা সালামের উত্তর দেয়া;
-আযানের উত্তর না দিয়ে অন্য কোন কাজে লিপ্ত হওয়া।
যদি কুরআন তিলাওয়াত রত থাকে, তাহলে তা বন্ধ করে তার উচিত আযান শোনা ও এর জবাব দেয়া।

অতএব, সম্প্রতি জনৈক নেতার ফাতওয়া “আযানের সময় কথা বন্ধ করার নিয়ম নাই” এটা সম্পূর্ণ মনগড়া একটি ফাতওয়া। বিশেষজ্ঞ না হয়ে কথা বলা অনধিকার চর্চার শামিল। আমরা যেন ইসলাম নিয়ে কথা বলতে আরো সতর্কতার পরিচয় দিই। আল্লাহ আমাদের তাওফীক দান করুন।

আযান ও ইকামাতের সময় শ্রোতার জন্য যে কাজগুলো করা উচিত নয় ।। শায়েখ ড. বি. এম. মফিজুর রহমান আল আজহারী।

About The Author
-

You may use these HTML tags and attributes: <a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>