করোনা ভাইরাসে মুসলমানদের পাস ফেল।। শায়েখ ডক্টর আব্দুস সালাম আজাদী।।

একবার এক শহরে নাকি মারাত্মক মন্বন্তর দেখা দেয়। অভাবের যাতনা সহ্য করতে না পেরে মানুষের মাঝে মৃত্যুর আনাগোনা বেড়ে গেল। গভর্ণর চেষ্টা করলেন বিপদ থেকে উদ্ধারের সমস্ত পথ বের করতে। প্রণোদনাও আদায় করলেন খলিফার কাছ থেকে। এত সব প্রচেষ্টার পরেও তার কাছে মানুষের মরে যাওয়ার খবর যখন প্রতিদিন যাচ্ছে, তিনি মুসলমানদের মাঝে এই বিভৎস অবস্থার কারণ বুঝার চেষ্টা করলেন।
তিনি শহর ময় নির্দেশ করে জানিয়ে দিলেন, আমি জনগণকে খাওয়াতে চাই। শহরের দ্বারপ্রান্তে আমি একটা বড় পাত্র মুখ ঢেকে রেখে দেবো। তোমরা নারী পুরুষ নির্বিশেষে রাতের ভেতরে এক গ্লাস করে মধু ঐ পাত্রে রেখে দেবে। তবে মধু দিয়ে আসার সময় সবাই একা একা যাবে, কেও কারো মধু দান যেন না দেখ।

সারা রাত নজরদারী রাখা হলো। শহরের কোন বাসা থেকেই মধু আসতে বাকি রইলো না। সকালে গভর্ণর দলবল নিয়ে পাত্রের কাছে এলেন। পাত্রের মুখ খুলে একদম তাজ্জব হয়ে গেলেন। তিনি দেখলেন পাত্র কানায় কানায় ভরা। এবং তা তরল পদার্থেই থৈ থৈ। কিন্তু হাত দিয়ে দেখলেন একদম পানি। জিভে লাগিয়ে নিশ্চিত হলেন এই পাত্রে এক ফোটাও মধু নেই; আছে শুধু পানি।

তিনি মর্মাহত হলেন, বিস্মিত হলেন, এবং মুসলমানদের এই কাজে রীতিমত ক্ষেপে গেলেন। তিনি শহরের নানা স্তরের লোকদের কাছে তাদের এই ব্যবহারের হেতু জানার জন্য আলাদা ভাবে একেক জনের সাক্ষাতকার নিলেন। অবশেষে সবার কাছ থেকে এক ও অভিন্ন একটা জবাব পেয়ে যারপর নেই হতবাক হলেন। তারা সবার ই একটা কথা, হুজুর আমি ভেবেছি অন্য সবাই তো মধু দেবে, কাজেই আমার দেয়া এক গ্লাস পানি কে আর দেখতেছে? তা ছাড়া আমার এক গ্লাস পানি তো মধুর সাথে মিশে যেয়ে বোঝা ই যাবেনা আদৌ পানি দেয়া হয়েছে কিনা!!

গভর্ণর এবার শহরের অলিগলি, স্কুল মাদ্রাসা, মসজিদ ইবাদাতখানা, হাট বাজার সব কিছু ঘুরে ঘুরে দেখলেন। এবং সমস্ত শহরবাসীর মাঝে আশ্চর্য্য এক মানসিকতার সন্ধান পেলেন, তার নাম হলো, অন্যের উপর নির্ভরতা, অর্থাৎ “আমার করার দরকার হবেনা অন্যে করবে এটা”।

কেও কোন কাজ করলে কোন রকম দায় শোধের মত করে। তা সুন্দর তো হয় ই না, বরং দেখা যায় তা আবার করা লাগে। জিজ্ঞেস করলে উত্তর আসে আমার করা লাগবে না। অন্য কেও এটা করে দেবে। কেও অনাহারে আছে। উপোসী ব্যক্তি বড় আশা করে শহর ময় ঘুরে বেড়াচ্ছে। কিন্তু খাবার পাচ্ছেনা। একেক জনের কাছে গেলে ভাবছে অন্যে দেবে, আমার দেবার আর দরকার হবেনা। এইভাবেই এই মুসলিম জনপদে ইসলামের চিরন্তন একটা শিক্ষা ভুলে গেছে। তা হলো, অভাবে কাতর হলেও নিজের চেয়েও মুসলিমরা অপর ভাইকে প্রাধান্য দেয়।

মুসলমানদের এই গুণটা ছিলো বিশ্ব মাতানো। ইয়ারমুকের যুদ্ধে মুসলিম পক্ষে আল হারিস ইবন হিশাম (আবু জাহালের ভাই), ইকরামা (আবু জাহালের ছেলে) এবং আয়্যাশ ইবন রাবী’য়া (আবু জাহালের বৈপিত্রীয় ভাই) রিদওয়ানুল্লাহি আনহুম মারাত্মক ভাবে আহত হন। যুদ্ধ শেষে একজনকে পানি নিয়ে আসতে দেখে আল হারিস পানি চান। তার দিকে যখন পানি নেয়া হচ্ছে, ইকরামা চাচার দিকে তাকালেন। আল হারিস পানি ইকরামাকে দিতে বলেন। ইকরামাকে যখন পানি দেয়া হচ্ছিলো ঐ সময় আয়্যাশ মাথা উঁচু করে পিপাসার কথা জানালেন। ইকরামা তাকে পানি দিতে বললেন। পানি বহনকারী আয়্যাশের কাছে যেতে না যেতেই দেখলেন আয়্যাশ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন। ঐখান থেকে ফিরে এলেন ইকরামার দিকে। তিনিও পানি পান করার আগেই আল্লাহর ডাকে সাড়া দিলেন। এবার আল হারিসের কাছে এসে মাথায় হাত দিয়ে পানি পান করাতে যেয়ে দেখলেন তিনিও মৃত।

আমি এই গল্পটা আজ করলাম কারণ করোনা ভাইরাস বৃটেইনে আক্রমন করার পর থেকে শুনতে ছিলাম বাজারে খাদ্য সংকট, সেনিটাইযারস এর কমতি, এবং টিস্যুর আকাল। গতকাল এক দোকানে গেলাম। দেখলাম মুসলমানদের অধঃপাতে যেতে আর বাকি নেই। সাদা ইংরেজদের মেইনস্ট্রীম শপিং মলে যখন বিভিন্ন জিনিষের সংকট সত্বেও দাম বাড়ায় নি। অথচ মুসলমানেরা হালাল খাদ্য গুলোতে অনেক দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। একেকজন এইসব সামগ্রি কিনতেছে এত বেশি, যা দেখে যে কেও মনে করবে এই লোক মনে হয় মদি দোকানের মালিক। অন্যের জিনিষ ও সে কিনে ঘর বোঝাই করে রাখতেছে। ফলে দেখা দিয়েছে বাজারে মারাত্মক সংকট। আমাদের মুসলমানদের কাছ থেকে এই পুঁজিবাদীদের মত আচরণ আশা করিনি আমি। মনে হচ্ছে করোনা এসেছে আসলে আল্লাহ আমাদের ঈমান, ঈসলাম, তাক্বওয়া ও ইহসানের বাস্তব পরীক্ষা নিতে। আর সেই সব পরীক্ষায় মনে হয় আমরা পাস করতে পারতেছিনা।

করোনা ভাইরাসে মুসলমানদের পাস ফেল।। শায়েখ ডক্টর আব্দুস সালাম আজাদী।।

About The Author
-

You may use these HTML tags and attributes: <a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>