এক বোন আজ কিছুটা নিরুপায় হয়ে আমার কাছে জানতে চাইলেন, শায়খ গরমের সময় কালো বোরকা পরতে খুব বেশি কষ্ট হয়। কারণ তা তাপ শুষে নেয়। এখন আমি কি অন্য কোন রঙের বোরকা পড়তে পারি? আমি কোন রকম চিন্তা না করেই ‘হ্যাঁ’ বললাম। তিনি বললেন, ভাইয়া, একটু সময় নিয়ে ফতোয়টা দিয়েন। কেননা আমি একাধিক শায়েখের কাছে শুনেছি, তারা কালো রঙ ছাড়া অন্য রঙের বোরকা পরা হারাম বলেছেন। তিনি একজন শায়েখের নাম ধরে বললেন, যে তার বাড়ির পাশে ঐ শায়খের একজন আত্মীয়া আছেন। তিনি এই বোনের বোরকা কালো না হলে তা পরা হারাম হবে নির্দেশ দিয়েছেন।
উল্লেখিত শায়খ আমার অনেক প্রিয় এবং কাছের বন্ধু। কিন্তু যেহেতু শায়খের কাছে সরাসরি ফতোয়া আমি শুনিনি, কাজেই আমি তার ফতোয়ার ব্যপারে মন্তব্য করতে রাজি হইনি। আমি বললাম, “আমার জানা মতে বোরকার রঙ কালো হতেই হবে এমন ফতোয়া আমার শায়খগণের কেও ই তো দেননি”।
বরং কালো রঙের হিজাব যদি এত আঁট সাঁট হয় যে, উলংগপনাকেও তা হার মানায়, তা হলে সেটাও হারাম। কেও কেও আবার কালো হিজাব পরেন বটে কিন্তু এতো বেশি কাজ করানো থাকে তাতে, যা খুবই আকর্ষণীয় মনে হয়। যদি ভিন্ন রঙের এমন কাপড় হয় যা সারা শরীরকে ঢাকে, এবং শরীরকে বিকশিত করে তোলে না। বরং এই পোশাকেই তার মেয়েত্বকে শালীনতার চাদরে মুড়ে দেয়, তাহলে কালো না হয়েও তা আঁট সাঁট কালো রঙের বোরকার চেয়েও ভালো হবে।
আমাদের শায়খ ইমাম ইবন বাযকে (র) বোরকার রঙ কালো হতে হবে কিনা প্রশ্ন করলে তিনি উত্তর দেনঃ
ليس للحجاب فيما نعلم لون مخصوص ولا صفة مخصوصة، بل الواجب على المرأة أن تحتجب بما تيسر لها من الملابس التي تعتادها في بلادها وبين قومها، وليس هناك شيء مخصوص إلا أنها تجتنب ما يلفت النظر وما يسبب الفتنة من الملابس الجميلة التي تلفت الأنظار إليها وربما جرت إلى شر، فتحرص على حجاب لا يلفت النظر ولا يكون فيه دعوة إلى الفتنة، ولا تشبه بالرجال، تكون ملابس نسائية ليس فيها ما يجر إلى الشر، هذا هو المشروع لها، ونسأل الله للجميع التوفيق.
অর্থাৎ, আমার জানা মতে হিজাবের জন্য কোন নির্দিষ্ট রঙ যেমন নেই, তেমন নির্দিষ্ট কোন ধরণ ও হতে হবে এমন নয়। বরং মেয়েরা এমন সহজলভ্য কাপড়ের হিজাব পরবে যা তাদের দেশে ও জাতির মাঝে পরতে অভ্যস্ত। এ ক্ষেত্রে কোন কিছু নির্দিষ্ট নেই। তবে এমন পোশাক পরবেনা, যা হবে খুব ই মনোহর সুন্দর কাপড়ের তৈরি যা দৃষ্টি আকর্ষণ করে, ফিতনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়, বা খারাপের দিকে টানে। তার উচিত এমন হিজাব পরা, যা দৃষ্টি আকর্ষণ করবেনা, ফিতনার দিকে টানবেনা, পুরুষের পোশাকের সাথে সাদৃশ্য রাখবেনা। বরং তা মেয়েদের ই পোশাক হবে, যাতে খারাপের দিকে নিয়ে যায় এমন কিছুই থাকবে না। এটাই তার জন্য শরীয়াতে বেঁধে দেয়া নিয়ম, আল্লাহর কাছে সবার জন্য তাওফিক্ব কামনা করি।
ইমাম নাসির উদ্দীন আলবানী (র) মেয়েদের হিজাবের জন্য ৮টা শর্ত বলেছেন, তা হলোঃ
১- এমন কাপড় হবে যা সারা শরীর ঢেকে ফেলবে।
২- বোরকার এই কাপড়টা যেন সৌন্দর্য্য বিকীর্ণকারী না হয়। আল্লাহ তাআলা মেয়েদের সৌন্দর্য প্রকাশ করতে না করেছেন।
৩- কাপড়ের পুরুত্ব যেন এতটাই হয় যাতে শরীরের রং ও অঙ্গের ধরণ তুলে না ধরে।
৪- এটা যেন এতোটাই ঢিলা হয়, যেন শরীরে খাঁজগুলো ফুটিয়ে না তোলে।
৫- হিজাবটা যেন সুগন্ধিযুক্ত না হয়।
৬- পুরুষের পোশাকের সাথে মেয়েদের পোশাকের সাদৃশ্য হয়ে যেন না যায়।
৭- যেন কোন অমুসলিমদের পোশাকের সাথে সাদৃশ্য না রাখে।
৮- এমন পোশাক যেন না হয়ে যায় যা অসাধারণ হয়ে যায়, ওই সমাজের জন্য এমন ইউনিক হয় যাতে এই পরিধানকারীকে সমাজ থেকে আলাদা করে দেয়। এতে সে প্রসিদ্ধ হয়ে ওঠে।
এই ৮টা শর্তের একটাও কিন্তু কালো রঙ হতে হবে এমন কথা বলা হয়নি। কাজেই বোরকা, হিজাব, আবায়াহ বা জিলবাব যা ই বলিনা কেন, এর রঙ কালো না হলে হারাম হবে এটা ঠিক নয়।
শায়খ মুহাম্মাদ সালিহ আলমুনাজ্জিদ বলেনঃ
وليس من هذه الشروط أن يكون لونه أسود ، فللمرأة أن تلبس ما شاءت غير أنها لا تلبس لوناً يختص بالرجال ، ولا تلبس ثوباً يكون زينةً في نفسه ، أي : مزخرفاً ومزيناً بحيث يسترعي أنظار الرجال ، لعموم قول الله تعالى : ( وَلا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ ) النور/31 . فإنه عمومه يشمل الثياب الظاهرة إذا كانت مزينة.
অর্থাৎ হিজাবের যে সব শর্ত আছে তাতে এর রঙ কালো হতে হবে এমন কোন শর্ত নেই। কাজেই একজন মহিলা তার ইচ্ছা মত বানানো হিজাব পরতে পারবে। তবে এমন রঙ যেন না হয় যা পুরুষেরই, অথবা এমন কোন পোশাক যেন না পরে, যা নিজেই একটা সৌন্দর্যের প্রকাশকারী। মানে এমন এমব্রোয়োডারি বা সৌন্দর্য দিয়ে সাজানো হবেনা, যাতে পুরুষের দৃষ্টি আকর্রষণ করে। কারণ আল্লাহ তাআলার বাণীঃ “তারা যেন তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে (নূরঃ৩১)” এমন সৌন্দর্যকেও বুঝায় যা খুবই সুন্দর করে বানানো উপরের পোশাক হিসেবে পরা হয়।
সাঊদীর প্রসিদ্ধ “আল-লাজনাহ আল দা-ইমাহ এর ফতোয়ার (১৭/১০৮) তে বলা হয়েছেঃ
لباس المرأة المسلمة ليس خاصاً باللون الأسود ، ويجوز لها أن تلبس أي لون من الثياب إذا كان ساتراً لعورتها ، وليس فيه تشبه بالرجال ، وليس ضيقاً يحدد أعضاءها ، ولا شفافا يشف عما وراءه ، ولا مثيراً للفتنة اهـ .
অর্থাৎ মেয়েদের পোশাকের জন্য কালো রঙ হতে হবে এমনটা নির্দিষ্ট করা হয়নি। বরং তার যে কোন রঙের পোশাক পরা জায়েয আছে, যদি তা সতরগুলো ঢেকে ফেলে। সেই পোশাকে থাকবেনা পুরুষের পোশাকের সাথে সাদৃশ্য, এমন টাইট হবেনা যা তার শরীরের খাঁজ নির্ণয় করে, বা এমন পাতলা হবেনা যা দিয়ে পোশাকের নিচে থাকা চামড়ার রঙ বুঝা যায়, এবং তা হবেনা এমন পোশাক যা দিয়ে ফিতনা উষকে দেয়।
অবশ্য আবু দাঊদ তারা সুনানের ৪১০১ এ একটা হাদীস উল্লেখ করেছেন, যাতে বুঝা যায় সাহাবী মহিলারা কালো হিজাব পরে মসজিদে আসতেন।
উম্মে সালামা বলেন, যখন “মেয়েরা যেন তাদের জিলবাবের উপরে একটা কাপড় নিচে টেনে নেয়” আয়াত নাযিল হয়, তখন আনসার মহিলারা বের হলে দেখা যেত যেন তাদের মাথার উপর কাপড়ের কারণে কাকের মত লাগছে।
এ থেকে বুঝা যায় তারা কালো কাপড় মাথার উপর দিতেন। আর কালো রঙ মেয়েরা পরলে তাদের দিকে পুরুষের লোভাতুর দৃষ্টি অনেক কমে। সে জন্য কালো রঙ ভালো, কিন্তু তাই বলে এই কালো রঙ পরাটাকে ফরয বলা যাবেনা। বরং অন্য রঙের বোরকা ও পরা যাবে।