অনেক কিছুই তো এখন হচ্ছে। এই যেমন বাংলায় অনুবাদ করা বই এর নাম হচ্ছে ইংরেজিতে। আমার কাছে খারাপ লাগেনা। অনুবাদে বাংলাদেশে খুব ঝামেলা আগে থেকেই দেখেছি। এক কাজ অনেকে অনুবাদ করার পাগলামিও কম নয়।
একবার এক শায়খ আমাকে একটা কুরআন দিলেন। যেটা বাংলায় অনুবাদিত। আমি তো হাতে নিয়ে খুশি হলাম। কারণ অনুবাদে তার নাম জ্বলজ্বলে। বললাম, ভাইজান এতো সময় কখন পান আসলে? ব্যবসায়, স্কুলে পড়ানো, সামাজিক কর্মকান্ডে সামনের কাতারে। এর ভেতর দিয়ে কুরআনের অনুবাদ!! তিনি হেসে বললেন, ওরে ভাইরে আমি কি করেছি? উমুক ভাই কয়েকটি অনুবাদ থেকে করে আমার নাম দিয়েছে।
এই উদাহরণ নিয়ে এসেছি কারণ অনুবাদের ক্ষেত্রে আমাদের দেশে পুস্তক ব্যবসায়ীদের খুব টাকার দরকার। গতবার দেশে যেয়ে খুলনায় একটা বইএর দোকানে ঢুকে বই দেখছি। দেখলাম রিয়াদুস সালেহীনের অনুবাদ করেছেন আমার এক বন্ধু। আমি খুশি হয়ে হাতে নিলাম। আমার জানা মতে এই অনুবাদটা পঞ্চম। এর আগে ৪টা অনুবাদের কথা আমার জানা।বন্ধুর অনুবাদ ও ইসলামিক সেন্টারের অনুবাদের মধ্যে কোন পার্থক্য দেখলাম না।
ইদানিং অনুবাদ কর্মে আরেক ঝামেলা তৈরি হয়েছে। আমি ফী যিলালিল কুরআন আরবিটা একবার শেষ করেছি। বাংলা অনুবাদ বাজারে এলে পড়তে থাকলাম। কিছু অনুবাদক আরবি থেকে করেছেন সন্দেহ নেই। কিন্তু কিছু অনুবাদ আমাকে খুবই বিক্ষুব্ধ করে। তাতে মূলের আনন্দ ও সাহিত্য নেই মোটেও। অনুবাদ কাজের সাথে জড়িত এক বন্ধুর কাছে শুনলাম, ভাই, উনার অনুবাদে যিলালের মজা পাচ্ছিনা কেন? তিনি একটু হেসে বললেন, সাইয়েদ কুতুবের অনুবাদ উনি করবেন বলে তোমার বিশ্বাস হয়? আমি বললাম, না, তা হয়না। তিনি বললেন, উনি ফী যিলালের উর্দু ভার্সন থেকে অনুবাদ করেছেন।
এই ভুলটা এখন বাংলাদেশে খুব বেশি হচ্ছে। ইংলিশ উর্দূ বোঝেন এমন কিছু লোক আরব শায়খদের বই অনুবাদ করছেন ঐ উর্দু বা ইংলিশ থেকেই। ফলে বাংলায় অনূদিত বই মূলের ছোঁয়া থেকে বিপুল বিঘৎ দূরে চলে যায়। সবচেয়ে জঘন্য লাগছে ঐ শায়খের আরবি বইটার নাম দেয়া হচ্ছে ইংরেজিতে। আমার শায়খ আয়েদ আলক্বারনী লন্ডনে এলে তার একটা প্রোগ্রামে গিয়েছিলাম। তিনি যেভাবে ইংলিশ বলেন তা শুনে হাসি লাগে। দেখলাম বাংলাদেশে তার একটা বইএর বাংলা ভাষায় অনুবাদ হয়েছে “ডন্ট বি স্যাড” নামে। আমি তাজ্জব হলাম, শায়খ কবে ইংরেজীতে বই লিখলেন। আসলে ঐটা তার “লা তাহযানের” অনুবাদ। শায়খ সাল্লাবীর একটা বই এর নাম ও দেখলাম ইংরেজিতে।
আমার কাছে এই কাজটা অনুচিত মনে হয়। যদি আপনি কোন আরব শায়খের বই অনুবাদ করতে চান, তাহলে আরবি থেকেই করা ভালো। প্রকাশকদের কাছে অনুরোধ করব পাঠককে কোন বই এর মূলানুগ করার জন্য ঐ বই এর মূল ভাষা থেকে অনুবাদ করান। বাংলাদেশে আরবি থেকে সুন্দর বাংলায় অনুবাদ করার লোকের আসলেই কোন অভাব নেই।
আরেকটা অনুরোধ করবো, যদি কোন আরবি বই অনুবাদ করতেই চান তাহলে চেষ্টা করেন ঐ আরবি নামটা রাখতে। না হয় তার বাংলায় অনুবাদ করতে। ইংরেজিতে নয়। এতে লাভ হলো বাংলাভাষীরা মূল বই এর নামটা মাথায় রাখলো। ইহইয়া উলুমিদ্দীন, কিমিয়ায়ে সাআদাত, সাহীহ বুখারী, রিয়াদুস সালেহীন ইত্যাদি নামের বই গুলো বাংলায় হলেও আরবি নামে আমার গর্ব লাগে। কারণ তাদের মূল নাম বাঙালীরা জানে।