ঘরে ঈদের সালাত আদায় করা যাবে কি না, এই বিষয়টা নতুন নয়। সাহাবাদের যুগেও এই বিষয়টার আমল খুজে পাওয়া যায়।
সহীহ রেওয়ায়েতে প্রমাণিত হয়েছে যে আনাস (রাঃ) ঈদের সালাত জামায়াতে না পাওয়ার পর তিনি ঘরে এসে পরিবারের সবাইকে নিয়ে -এমনকি দাস-দাসীদেরকে একত্রিত করে তাকবীর ঈদের জামায়াত করতেন। তবে, সেখানে তিনি ঈদের খুতবা দিতেন না। কোন এক সময়ে আনাস (রা) এর দাস আব্দুল্লাহ বিন আবি উতবাহ দুই রাকায়াত ঈদের সালাতের ইমামতি করেছেন। (দেখুনঃ এরওয়াউল গালীল, আলবানী ৩/১২০), বুখারী হাদীস নং ৯৮৭ এর আগে, মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা (হাদীস নং ৫৮০৩), সুনানে বায়হাকী (৬২৩৭)।
এই হাদীস বা সাহাবার আমলের ওপর ভিত্তি করে মালেকী, শাফেয়ী ও হাম্বলী মাজহাবে ঘরে ঈদের সালাত আদায় করা যাবে বলে মতামত দেওয়া হয়েছে। (দেখুনঃ মুখতাসারুল ঊম্ম- মুযানী ৮/১২৫, শারহুল খারশী ২/১০৪)।
হানাফী মাজহাবে বলা হয়েছে যে যদি ইমামের সাথে ঈদের সালাত না আদায় করতে পারে তাহলে আলাদা বা একা তা আর আদায় করা যাবে না। (দেখুন আদ-দুররুল মোখতার ২/১৭৫)। এর পক্ষে হাদীসের কোন প্রমাণ না পাওয়া গেলেও যুক্তি হলো- ঈদ হলো ব্যাপক গোষ্ঠীয় ইবাদত, পারিবারিক নয়। ফলে, ঘরে তা আদায় করা যাবে না। ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রঃ) ও ইবনে উসাইমিন হানাফীদের মতের পক্ষে মত দিয়েছেন। (দেখুনঃ আশশারহুল মুমতি৫/১৫৬)।
সাউদী স্থায়ী ফতোয়া কমিটির ফতোয়া (৮/৩০৬) বলেছেন যে যদি কেউ ঈদের সালাতের জামায়াত না পায়, তিনি ঘরে বা অন্য কোথাও আবার আলাদা জামায়াত করতে পারবেন ঈদের অতিরিক্ত তাকবীর সহ।
কিন্তু এখানে সালাতের পর ঈদের খুতবা দিবেন না। এই সালাতের জন্যে ইক্বামত দিতে হবে না এবং ক্বেরাত জোরে পড়বেন। ঈদের দিনে ঘরে ঈদের সালাত করলে আগে ঈদের সালাত পড়বেন এবং এরপর এশরাকের সালাত পড়বেন। কারণ ঈদের দিনে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওসাল্লাম) ঐ দিনের সালাত শুরু করতেন ঈদের সালাত দিয়ে, এশরাকের সালাত নয়।
মিশরের গ্রান্ড মুফতিও ফতোয়া দিয়েছেন যে এই বছরের কোভিট-১৯ এর কারণে পরিবারের সদস্যরা নিজেরা ঘরেই ঈদের সালাতের জামায়াত করতে পারবেন। কারণ এর পক্ষে সাহাবীদের আমল পাওয়া যায়।
(দেখুনঃ https://www.albayan.ae/editors-choice/…/2020-05-15-1.3859100 )
আমরা তাহলে কোনটা আমল করব?
এখানে আপনাদের কাছে ভিন্নভিন্ন মত উপস্থাপন করা হলো। আপনারাই সিদ্ধান্ত নিবেন কোনটা আমল করবেন।
তবে, যেহেতু আনাস (রাঃ) নিজেই বাসায় পরিবারের লোকদেরকে নিয়ে ঈদের সালাত করেছেন বলে সহীহ হাদীসে প্রমাণ পাওয়া যায়, তাই আমরাও সে অনুযায়ী আমল করতে পারি। (আমি এই মতকে বেশী শক্তিশালী মনে করি এবং আমি এবার এই মতের ওপর আমল করব বলে নিয়ত করেছি।)
আল্লাহ আমাদের সবাইকে কবুল করুন। আমীন।